
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। মুসলমানের সর্ববৃহৎ দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব এর মধ্যে একটি হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল আযহায় পশু কুরবানীর বিধান রয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণত গরু, ছাগল ও মহিষ কোরবানি করা হয়ে থাকে। কোরবানির পশুর চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান । এই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে তৈরি হয় আমাদের জুতা ব্যাগ সহ আরো অনেক কিছু। আমাদের দেশে অর্থনীতিতেও রয়েছে এই চামড়া শিল্পের অবদান । বিগত কয়েক বছর যাবত একটি অসাধু মহলের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে পশুর চামড়ার সঠিক মূল্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা ।
পশুর চামড়া ন্যায্যমূল্য পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই একটি সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে । যাতে করে আমরা এটিকে সাধারণ অবস্থার চেয়ে আরো দীর্ঘদিন সুরক্ষিত রাখতে পারি এবং অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারি। পশু কোরবানির পর প্রয়োজন সঠিক উপায়ে চামড়া সংরক্ষণ করা। যদি সঠিক উপায়ে চামড়া সংরক্ষিত না হয় তাহলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জবাইয়ের পর থেকে চামড়া ছাড়ানো পর্যন্ত সচেতন থাকা সবচেয়ে জরুরি।
·
পশু কেনার সময়ও লক্ষ রাখা উচিত যাতে চামড়ায় কোনও ক্ষতচিহ্ন না থাকে।
·
পশু বাড়িতে আনার পর খড় বা চট তার উপর রাখুন যাতে কোনভাবে পশুর শরীরে আঘাত না লাগে।
·
পশু বাঁধার জন্য পাটের দড়ি ব্যবহার করুন ।
·
পশুকে এমন ভাবে টানা-হেঁচড়া করবেন না যাতে চামড়া আঘাত লাগে।
·
নাইলন ,প্লাস্টিকের দড়ি , লোহার শিকল ধারালো কোন দড়ি যা পশুর চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু দিয়ে বাঁধা থেকে বিরত থাকুন।
·
জবাইয়ের আগে পশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ান, এতে চামড়া সহজে ছাড়ানো যাবে।
·
কোরবানির দিন পশুকে ভুসি, খড় বা ঘাস খাওয়াবেন না।
·
পশু কোরবানির জন্য সমতল জায়গা বেছে নিন। আঁকাবাঁকা কিংবা গর্তযুক্ত স্থানে কোরবানি দেবেন না।
·
কোরবানি দেওয়া ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য দক্ষ লোক বেছে নেওয়া জরুরি।
·
জবাইয়ের পর পশুকে শক্ত কোনও খুঁটি বা গাছের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দিলে চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়। খুঁটি বা গাছের সঙ্গে বেঁধে জবাইয়ের দাগ থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে ধীরে ধীরে হালকা করে নিচের দিকে টেনে আলাদা করতে হবে চামড়া।
·
চামড়া ছাড়ানোর পর লেগে থাকা রক্ত, চর্বি যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে ফেলুন। না হলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে পচন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চামড়ায়।
·
পরিষ্কার পানি দিয়ে চামড়া ভালো করে ধুয়ে হালকা রোদে দিন পানি ঝরে যাওয়ার জন্য।
·
চামড়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার সময় চামড়া টানা-হেঁচড়া করবেন না।
·
চামড়া ছাড়ানোর তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে তা বিক্রি করা না গেলে দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
·
অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণকৃত চামড়ার গুণগত মান রক্ষা করে সুবিধামত সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
·
ইউনিয়ন, উপজেলা সদর, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান (হাট/বাজার) যেখানে সহজেই চামড়া ক্রয়-বিক্রয় করা সম্ভব সেখানে অস্থায়ী চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
·
লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। সংরক্ষণ করার জন্য চামড়ার ধরন বুঝে লবণ লাগাতে হবে। সাধারণত চামড়ার ওজনের বিশ শতাংশ হারে লবণ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ চামড়ার ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি হলে লবণ ব্যবহার করতে হবে ৩ থেকে ৪ কেজি। চামড়া বিছিয়ে তার উপর লবণ ছিটিয়ে দিলে চামড়ায় থাকা পানি ও ব্যাক্টেরিয়া বের হয়ে আসে। তারপর চামড়া ভালো করে ভাঁজ করে রাখতে হয়।
·
লবণ এমনভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেনো চামড়ার ভিতরের (ফ্লেস সাইডের) কোনো অংশ ফাঁকা না থাকে। সবখানে লবণ সমভাবে চামড়ায় ছড়িয়ে দিতে হবে।
·
প্রথমবার লাগানো লবণ চুষে নিলে আরও একবার লবণ ছড়িয়ে দিতে হবে।
·
সাধারণত গরুর চামড়ার জন্য ৫-৭ কেজি এবং ছাগল, ভেড়ার জন্য ১.৫-২ কেজি লবণ দরকার হয়।
·
পিকলিং পদ্ধতি
·
লবণের পর্যাপ্ততা না থাকলে লবণ ও পানির মিশ্রনের সাহায্যেও কিছুদিন চামড়া সংরক্ষণ করা যায়।
·
চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন হিমাগারেও। ট্যানারিগুলোতে সাধারণত চামড়া সংরক্ষণ করার জন্য হিমাগার থাকে। ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধক রাসায়নিক দ্রব্যের সাহায্যে সেখানে সংরক্ষণ করা হয় পশুর চামড়া।
সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করলে, চামড়া ছাড়ালে, চামড়া সংরক্ষণ করলে দেশের কোটি কোটি টাকা যেমন বাঁচবে তেমনি পরিবেশ বাঁচবে । তাই সবাইকে এসব পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
► সকল ক্যাটাগরী ব্রাউজ করতে এখানে ক্লিক করুন... ⟲ |
এই আর্টিকেলের তথ্য ও বিষয়বস্তু পূর্ব-প্রকাশিত উৎস থেকে গৃহীত হয়েছে বা তার আলোকে সম্পাদিত হয়েছে। উক্ত তথ্যের দায়ভার কোনভাবেই আমাদের নয়। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন.......... All information and data used in this article collected from a pre-published source. We are not responsible for that information. Read details...... | |||
আপনার একটু সমর্থনই আমাদের এগিয়ে চলা ও আরও ভাল কিছু করার অনুপ্রেরণা যোগায়। আপনার মূল্যবান সমর্থনটি জানাতে ভিজিট করুন আমাদের সমাজিক যোগযোগের পেজগুলোতে ও লাইক, ফলো ও সাবস্ক্রইব করে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ | |||
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। বিস্তারিত....... |
0 Comments: